HSC র পর বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি | বিদেশে পড়াশোনার A to Z গাইডলাইন
মাত্রই HSC পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা রীতিমতো ব্যস্ত দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে। অনেকেই আবার চাচ্ছেন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে। যারা এইচএসসি'র পর বিদেশে উচ্চশিক্ষা লাভের কথা ভাবছেন তাদের জন্যই মূলত আজকের এই পোস্ট। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার যোগ্যতা, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা, USA এবং UK তে উচ্চশিক্ষা, কানাডায় উচ্চশিক্ষা সহ বিভিন্ন দেশের সরকারি স্কলারশিপ , বিভিন্ন দেশের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার সহজ উপায়, স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা এই সবকিছুই আজকের আলোচনার মূল বিষয়।
HSC র পর বিদেশে পড়াশোনা করে লাভ কী:
বিদেশে উচ্চশিক্ষা লাভের মোক্ষম সময়ই হচ্ছে HSC র পর। অনেকেই আবার দেশের একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করে গবেষণার কাজে বিদেশে যান। তবে বিদেশে স্নাতক পড়তে গেলে স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগটা বেশি থাকে। বিদেশি শিক্ষা ব্যবস্থা , উন্নত জীবন যাত্রা, গবেষণা ও ভাল চাকরির হাতছানি থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার স্বপ্নটা বেশি দেখে থাকেন।
উচ্চ মাধ্যমিকের পরেই বাইরের দেশে পড়াশোনা করতে যাবার উপযুক্ত সময়। উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে দেখা যায় নানান বিষয়ে নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয় এবং বাইরের দেশের জীবন যাপন প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হওয়ার ফলে সেখানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা দেশের অন্য সব শিক্ষার্থীর তুলনায় অধিক দক্ষতাসম্পন্ন, চিন্তাশীল এবং সৃজনশীল হয়ে থাকে।
এটা কোনো ক্রমেই অস্বীকার করা যাবে না যে, যে সব শিক্ষার্থী বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করেন মনে হয় ভৌগোলিক কারণেই তারা অন্যদের তুলনায় বহুগুণ বেশি স্বাধীনচেতা ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে থাকেন। সেই সাথে বুদ্ধিমত্তা ও ইনোভেটিভ দক্ষতা অনেক গুণ বেশি থাকে। তাছাড়া বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা এবং অর্জিত জ্ঞানটাকে কাজে লাগিয়ে দেশে এসে কিছু করতে পারলে দেশ হবে অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধশালী।
HSC র পর বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে আগে থেকেই মেন্টাল প্রিপারেশন অতি জরুরি। ৭/৮ মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা ও প্রিপারেশন শুরু করে দিতে হবে। কারণ পাসপোর্ট, IELTS, ও আরো বিভিন্ন ডকুমেন্ট রেডি করার মত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি:
এইচএসসি র পর বিদেশে পড়াশোনার কথা মাথায় আসলে সবার আগে একটা চিন্তাই আসে - 'কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে '। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার প্রস্তুতি নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত A to Z তথ্য, বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়, স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই পোস্টে। তো , চলুন দেখে আসি বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়ার জন্য কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন-
১) টার্গেট ঠিক করা :
মুনজেরিন অক্সফোর্ডে পড়ছে। তৌশি পড়ছে আমেরিকায় । নানাজীবা কানাডায়। ইশ্ , আমিও যদি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারতাম! ব্যাপারটা আসলে এমন না। আপনাকে ভেবে চিন্তে দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনার মেধা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর্থিক সাপোর্ট, পরিবারের সম্মতি এ সবকিছুই বিবেচনায় রেখে আপনার মনস্থির করতে হবে যে " আমার টার্গেট বাইরের দেশে পড়াশোনা।
২) একাডেমিক রেজাল্ট:
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ নিতে চাইলে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা অতি জরুরি। বর্তমানে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই SSC ও HSC পরীক্ষায় অর্জিত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে স্কলারশিপ অফার কবে থাকে। আপনার একাডেমিক রেজাল্ট যত ভাল হবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং স্কলারশিপের সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে।
৩) এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস :
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসকে অতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। আপনার যদি পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃত্তি, খেলাধুলা, স্বেচ্ছাসেবা, লেখালেখির অভ্যাস, রান্নাবান্না, তর্কবিতর্ক, ফোটোগ্রাফি ও অলিম্পিয়াড এর মত এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস থেকে থাকে তাহলে এগুলো আপনার আবেদন পত্রে প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে।
৪) ভাষাগত দক্ষতা যাচাই:
বাইরের দেশে পড়াশোনা করতে গেলে ভাষাগত দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যেই দেশেই পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক ঠিক সেই দেশের ভাষার উপর ভাল দক্ষতা থাকতে হবে। বেশিরভাগ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইংরেজি ভাষায় পরিচালিত হওয়ায় শিক্ষার্থীকে ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হয়। সাধারণত পরীক্ষার মাধ্যমে ভাষার উপর পারদর্শিতা যাচাই করা হয়ে থাকে। আর বর্তমানে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ইংরেজি ভাষায় পারদর্শিতা যাচাইয়ের পরীক্ষার নাম হলো IELTS, TOEFL, GRE, GMAT ইত্যাদি।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো কিংবা ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের এইসব পরীক্ষায় ভাল স্কোর অর্জন করতে হবে। তবে চীন, জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, ফ্রান্স, তাইওয়ান এই সব দেশে পড়াশোনা করতে গেলে তাদের নিজস্ব ভাষায় পড়ালেখা করতে হয়। তাই এইসব দেশগুলোর ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন তাদের নিজস্ব ভাষা জানা। তাদের নিজস্ব ভাষা জানা থাকলে এইসব দেশের বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম জবেরও ভাল সুযোগ থাকে।
অন্যদিকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং এই দেশগুলোতে পড়তে গেলে IELTS লাগবে। তবে এক্ষেত্রে আপনার জন্য একটা চমৎকার অপশন রয়েছে। আপনি যদি ঐসব দেশে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ইংলিশ কোর্স করে নিতে চান সেক্ষেত্রে আবেদনের সময় আপনার IELTS লাগবেনা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইংলিশ কোর্স বাবদ নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।
৫) প্রোগ্রাম নির্ধারণ:
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোর্স বা প্রোগ্রাম নির্ধারণের সময় বেশ কিছু বিষয় আপনার মাথায় রাখতে হবে। আপনি কোন্ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে চান, কোন্ বিষয়ের প্রতি আপনার ভাললাগা কাজ করে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোনটার চাহিদা বেশি, দেশে এবং বিদেশের চাকরির বাজারে কোনটার কদর বেশি, কোনটি নিয়ে পড়াশোনা করলে পেশাগত উন্নতি ও লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। আপনি যেই দেশে পড়তে যেতে চান সেই দেশের শিক্ষার মান এবং পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে কতটুকু গ্রহণযোগ্য, কোর্স শেষ করার পর কোথাও কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার সুযোগ সম্ভাবনা কতটুকু, কোর্সের মেয়াদকাল এবং কোর্স ফি কত এই সবকিছু মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
আপনার মাথায় ঘুরপাক খাওয়া উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে আপনি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্য এবং পরামর্শ কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারেন।কিংবা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে অনেক মেন্টর বা পরামর্শদাতা আছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
৬) ক্রেডিট ট্রান্সফার:
ধরুন আপনি দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একটি কোর্স বা প্রোগ্রামে কিছু দিন পড়াশোনা করেছেন। এখন আপনি ঐ কোর্সটিই বাইরের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে দেশে করা কোর্স টির ক্রেডিট গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অব্যাহতিপত্র চাইতে পারেন। আপনি কতটুকু কোর্স ক্রেডিট পাবেন তা নির্ধারণ করে দিবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর জন্য যে জিনিসগুলো লাগবে :
# একাডেমিক সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, প্রত্যয়নপত্র
# কোর্স আউটলাইন ও পাঠ্য তালিকা
# কোর্স লেভেল সংক্রান্ত তথ্যাদি
# কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ কর্তৃক সুপারিশনামা
# কোর্স অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি
# গ্রেডিং সিস্টেম সংক্রান্ত তথ্য
# কোর্সের মেয়াদ, লেকচার, ঘন্টা , ল্যাবরেটরিতে কাজের ঘন্টা, ফিল্ড ওয়ার্ক ইত্যাদি
# পরীক্ষা, রচনা, প্রজেক্ট ওয়ার্ক ইত্যাদি
HSC র পর বিদেশে উচ্চশিক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া:
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক সময়ে সেশন শুরু হয়। তাই প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি শুরু ও শেষের তারিখ ভালভাবে মনে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ডায়রীতে লিখে রাখবেন যাতে আবেদন মিস হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
এইচএসসি'র পর বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয় একাডেমিক সনদপত্র সহ যাবতীয় ডকুমেন্টস ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে প্রস্তুত রাখতে হবে। কোনো ডকুমেন্টস যাতে কোনোভাবেই বাদ না পড়ে সেই জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। উল্লেখ্য যে নিজের সমস্ত একাডেমিক সনদপত্র, ট্রান্সক্রিপ্ট ইংরেজিতে করিয়ে নিতে হবে। সিভি এবং কাভার লেটার যাতে সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য হয় সেই দিকে নজর দিতে হবে। আবেদনের জন্য যা যা লাগবে :
# পাসপোর্ট
# জন্ম নিবন্ধন সনদ
# ন্যাশনাল আইডি কার্ড ( যদি থাকে)
# SSC এবং HSC র সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, টেস্টিমোনিয়াল
# ছবি পাসপোর্ট সাইজের
# SOP লেটার ( স্টেটমেন্ট অব পারপাস)
# লেটার অব মোটিভেশন
# লেটার অব রিকমেন্ডেশন
# IELTS / TOEFL সার্টিফিকেট
সাবমিট করার আগে আবেদনের জন্য যা যা ডকুমেন্টস চাওয়া হয়েছে তা ভালভাবে চেক করে নিবেন। ছবি এবং প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রের ফটোকপি অবশ্যই অবশ্যই সত্যায়িত করে নিতে হবে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একটি বিশেষ শাখা থেকে আপনার সমস্ত কাগজপত্র বিনামূল্যে সত্যায়িত করে নিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সমস্ত কাগজপত্রের অরিজিনাল কপি তাদেরকে দেখাতে হবে। এছাড়া নোটারি পাবলিক থেকেও সত্যায়িত করতে পারবেন। ভর্তি প্রক্রিয়া যদিও অনলাইনে হয় , আপনার ডকুমেন্টগুলোর হার্ডকপি কুরিয়ারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে।
স্টেটমেন্ট অব পারপাস :
এইচএসসি র পর বাইরের দেশে পড়াশোনা করতে চাইলে SOP অর্থাৎ Statement of Purpose জমা দেওয়া অতি জরুরী। স্টেটমেন্ট অব পারপাস হলো আপনার ব্যক্তিগত গল্প। আপনি কেন এখানে পড়তে চাচ্ছেন, এই বিষয়টি কেন আপনার পছন্দ, আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা কী, অন্যদেরকে রেখে কেন আপনাকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া উচিত, কোর্স শেষে দেশে গিয়ে কী করবেন ? এইসব বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে গল্পের মতো করে লিখতে হবে।
মানুষ হিসেবে আপনি কেমন, এখানে পড়াশোনার চাপ সামলাতে আপনি কতটুকু প্রস্তুত, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করা সক্ষমতা আছে কিনা, আপনার প্রতিভা, ব্যাকগ্রাউন্ড, অভিজ্ঞতা ও সহিষ্ণুতা SOP তে অন্তর্ভুক্ত করতে হয় যাতে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। কোনো প্রকার মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে যা সত্য ঠিকঠাক করে প্রাসঙ্গিক এবং প্রেরণামূলকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন। আপনার স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করতে ভুলবেন না।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবজেক্ট চয়েজ:
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে বেশ কিছু জিনিস ভালভাবে বুঝেশুনে অনেক ভেবেচিন্তে নির্বাচন করতে হয়। যে বিষয়টি প্রথমেই ভাবতে হবে সেটি হলো দেশ নির্বাচন। অর্থাৎ আপনি কোন্ দেশে পড়বেন সেটা। এজন্য আপনাকে দেখতে হবে কোন্ দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষার মান এগিয়ে। বর্তমান সময়ে শিক্ষার গুণগত মান বিচারে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, জাপান অনেক এগিয়ে। এই দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে যেকোনো একটিকে সিলেক্ট করতে পারেন। একেক দেশের পড়াশোনার স্টাইল, ভর্তি প্রক্রিয়া, টিউশন ফি, থাকা খাওয়ার খরচ, স্কলারশিপের ধরন আলাদা। আপনার আগ্রহ, আর্থিক সামর্থ্য ও যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশ সিলেকশন করবেন। দেশ নির্বাচন হয়ে গেলে সাবজেক্ট ( বিষয় ) নির্বাচনের পালা। বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অনেক বিষয় ( Subject) আছে যেগুলো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই। এদিকে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারন দেশে এসে আপনাকে কিছু একটা করতে হবে। আপনাকে এরকম বিষয় পছন্দ করতে হবে যেটার প্রতি আপনার আগ্রহ কাজ করে এবং দেশ বিদেশের চাকরির বাজারে যেই সাবজেক্টের চাহিদা বেশি সেটি চয়েজ করতে হবে। ঝোঁকের মাথায় কোনো সাবজেক্ট চয়েস করা যাবে না।
এবার আসি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ব্যাপারে। উন্নত দেশগুলোর মতো কিছু কিছু অনুন্নত দেশেও ভালো মানের ইউনিভার্সিটি রয়েছে। আপনি ইচ্ছা করলে সেগুলো চয়েজ করতে পারেন। এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফিও তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফ্রি স্কলারশিপের ব্যবস্থা প্রচলন আছে, আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। আপনাকে খুঁজ নিয়ে দেখতে হবে কোন্ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্কলারশিপের ব্যবস্থা আছে। টিউশন ফি এবং স্কলারশিপ সম্পর্কে খুঁজ খবর নেওয়ার পর আপনাকে জানতে হবে শিক্ষার গুণগত মান, পরিবেশ, সুযোগ সুবিধাদি, জীবন যাপন মান, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, আবহাওয়া। উপরোক্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করে আপনাকে ভর্তির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি এগুলো সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবেন প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে।
বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধায় আমি দ্বিতীয়বার রিপিট করছি। বিশ্ববিদ্যালয় চয়েসের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন -
# আপনার পছন্দের সাবজেক্ট ( বিষয়) আছে কিনা
# পড়ালেখার গুণগত মান কেমন
# World Ranking এ বিশ্ববিদ্যালয় কতটা এগিয়ে
# শিক্ষকদের পাঠদানের মান কেমন
# কোর্সের মেয়াদ এবং কোর্স ফি কত
# স্কলারশিপ সুবিধা আছে কিনা
# আবাসন ব্যবস্থা কেমন
সবকিছু সম্পর্কে ভালোভাবে জানা বুঝা হয়ে গেলে আপনি যেটা করবেন সেটা হচ্ছে যেকোনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন না করে আপনি চেষ্টা করবেন ৫/৬ টা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে। এতে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
বিদেশে স্কলারশিপ:
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি। স্কলারশিপ ছাড়া বিদেশে পড়াশোনা করাটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় কঠিন ব্যাপার।
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়:
এখন আলোচনা করব বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই আজন্ম লালিত স্বপ্ন বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা। কারন স্কলারশিপ মানেই ফ্রি পড়াশোনা। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীই জানেনা কিভাবে স্কলারশিপ খুঁজতে হয়। কিভাবে স্কলারশিপের আবেদন করতে হয়। সঠিক পরিকল্পনা এবং গাইডলাইনের অভাবে স্কলারশিপ পাওয়ার স্বপ্ন আজীবন স্বপ্নই থেকে যায়।
এইচএসসি'র পর বিদেশে স্কলারশিপ নিতে যা যা জানতে হবে
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার খরচ আকাশচুম্বী হওয়ায় অনেকের পক্ষে সেই খরচ বহন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে যদি একাডেমিক রেজাল্ট ভাল থাকে এবং ভাষা দক্ষতা যাচাই (IELTS / TOEFL) পরীক্ষায় ভাল স্কোর থাকে তাহলে স্কলারশিপের মাধ্যমে বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন।স্কলারশিপ সম্পর্কে যে সব বিষয় জানা জরুরী:
# স্কলারশিপের মেয়াদকাল কত বছর এবং স্কলারশিপ নবায়নযোগ্য কিনা
# নবায়ন করার সুযোগ থাকলে নবায়ন করতে কী যোগ্যতা দরকার
# স্কলারশিপের টাকা কোন্ কোন্ খাতে ব্যয় করা যাবে
# স্কলারশিপের টাকা দিয়ে আপনার জীবনযাত্রা ও পড়ালেখার খরচ পুরোপুরি নির্বাহ করা সম্ভব হবে কি না।
বিদেশে পড়াশোনার জন্য কোন্ কোন্ দেশ স্কলারশিপ দিয়ে থাকে :
আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর কিছু সংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পড়তে যায়। এদেশের মেধাবীরা স্কলারশিপ নিয়ে সাধারণত যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, রাশিয়া, আজারবাইজান, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি , জার্মানি, ব্রুনাই, তুরস্ক এইসব দেশের পড়তে যান। বিশ্বব্যাপী খ্যাতনামা কয়েকটি বৃত্তি হলো যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, সেভেনিং স্কলারশিপ। কানাডার আইলট স্কলারশিপ, কানাডা হাম্বার ইন্টারন্যাশনাল এন্ট্রান্স স্কলারশিপ। জাপানের মনবুশো বৃত্তি, মনবুকাগাকুশো বা মেক্সট বৃত্তি, এম এইচ টি টি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম । জার্মানির DAAD স্কলারশিপ। অস্ট্রেলিয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ ইত্যাদি। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক বেশ কিছু বৃত্তি প্রদান করা হয়। বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একেবারে কম ব্যয়ে অথবা বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ রয়েছে জার্মানিতে। প্রতি অর্থবছরে জার্মান সরকার তাদের রাষ্ট্রীয় বাজেটের বিশাল একটি অংশ ব্যয় করে থাকে শিক্ষা খাতে। কাজেই এখানে রয়েছে বৃত্তি সহ গুনগত মানের শিক্ষা লাভের ব্যাপক সম্ভাবনা।
এছাড়াও উত্তর ইউরোপের স্ক্যান্ডেনেভিয়ান ৫টি দেশ যেমন সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড এই দেশগুলোতে রয়েছে স্কলারশিপ সহ পড়ালেখার দারুন সুযোগ। নরওয়েতে প্রথম সারির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি র পড়াশোনা পুরোপুরি ফ্রি। তবে এক্ষেত্রে নরওয়েজিয়ান ভাষা দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ডেনমার্ক এবং ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা। বিনামূল্যে থাকা খাওয়া সহ টিউশন ফি একদম ফ্রি। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হয়। তাই এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের পর থেকেই ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিতে থাকবেন।
বাংলাদেশিদের জন্য বিদেশে পড়াশোনার ৫টি বিখ্যাত স্কলারশিপ :
মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য অসংখ্য স্কলারশিপ রয়েছে সবগুলোর নাম হয়তো আমরা কেউ জানিনা। যেসব শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য এখানে আমরা বিশ্বের জনপ্রিয় ৫টি স্কলারশিপের বর্ণনা দিচ্ছি-
জাপানের মেক্সট স্কলারশিপ:
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পড়াশোনার গুণগত মান বিচারে শিক্ষার্থীদের পছন্দের দেশ হচ্ছে জাপান। দেশটি প্রতি বছর বিদেশে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে। জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কলারশিপের নাম হচ্ছে MEXT Scholarship. এটাকে আবার ' মনবুকাগাকুশো ' স্কলারশিপও বলা হয়ে থাকে। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি ছাড়াই একদম বিনামূল্যে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। এমনকি আবেদন করতে এবং ভর্তি হতেও কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না। তাছাড়া প্রতি মাসে থাকবে উপবৃত্তির ব্যবস্থা। দেশে আসা যাওয়ার জন্য ফ্রি বিমান টিকেট। এখানে পড়াশোনার মাধ্যম ইংরেজি হলেও IELTS কিংবা TOEFL স্কোর দেখাতে হয়না। স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি মিলিয়ে প্রতি বছর ২০০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী স্কলারশিপের মাধ্যমে এখানে পড়াশোনার সুযোগ পান। প্রতি বছর মার্চের শেষের দিকে বৃত্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং শেষ হয় মে মাসে।
২) চীনের CSC স্কলারশিপ:
CSC এর পূর্ণরূপ হচ্ছে চাইনিজ স্কলারশিপ কাউন্সিল । এটি চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চীন সরকার প্রদত্ত একটি বৃত্তি। এই স্কলারশিপ দেওয়া হয় চীনা শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের চীনে পড়াশোনা করার জন্য। জনপ্রিয় এই স্কলারশিপের আওতায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের চীনের ২৫০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনোটিতে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে এখানে পড়াশোনার শর্ত হচ্ছে চীনা ভাষায় দক্ষতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে। তবে এক্ষেত্রে চীনা ভাষায় দক্ষতার সনদ না থাকলেও সমস্যা নেই। স্কলারশিপ পাওয়ার পর চীনে গিয়ে প্রথম এক বছর বাধ্যতামূলকভাবে চীনা ভাষা শেখানো হয়। এই স্কলারশিপের আওতায় আপনি পাবেন -
# সম্পূর্ণ টিউশন ফি
# থাকা খাওয়া ফ্রি
# মাসিক উপবৃত্তি ২৫০০ ইউয়ান
# চীনে যাবার এবং পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসার বিমান টিকেট ফ্রি
# মেডিকেল ইন্সুরেন্স ।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে স্কলারশিপের আবেদন গ্রহণ করা হয়।
রাশিয়ান গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ:
একমাত্র রাশিয়াতেই রয়েছে একেবারে কম খরচে উন্নত শিক্ষার সুব্যবস্থা। রাশিয়ার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই World Ranking এ শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। রাশিয়ান সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদেরকে আকৃষ্ট করতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে বৃত্তি প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বৃত্তি হলো রাশিয়ান গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ। ফুল ফান্ডেড এই স্কলারশিপ পেতে হলে পড়ালেখা করতে হবে রাশিয়ান ভাষায়। চিন্তা বা ভয়ের কিছু নেই স্কলারশিপ পেয়ে গেলে সরকারি খরচেই ৭ মাস রাশিয়ান ভাষা ও ২ মাস রাশিয়ান সংস্কৃতির উপর কোর্স করানো হয়ে থাকে।
এই স্কলারশিপের আওতায় আপনি যা যা পাবেন -
# টিউশন ফি
# পরীক্ষার ফি
# বিনামূল্যে বই ( ফেরত যোগ্য)
# ভিসা খরচ
# আবাসন খরচ
# ২৫০ ডলারের মতো মাসিক ভাতা।
কিন্তু বিমান ভাড়া এবং খাবার খরচ নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। রাশিয়া পৌঁছেই প্রথম কাজ হচ্ছে একটা হেলথ ইন্সুরেন্স করে নেওয়া। এখানে স্নাতক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক এবং কমার্সের ১৫টির অধিক বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও আছে প্রকৌশল এবং চিকিৎসাবিদ্যা। এখানকার ৬ বছর মেয়াদি মেডিকেল কোর্সের নাম " ডক্টর অব মেডিসিন ( এমডি)" । এটি বাংলাদেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল এসোসিয়েশন কর্তৃক স্বীকৃত। এই স্কলারশিপের জন্য যা যা লাগবে -
# এসএসসি, এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট ও নম্বরপত্র
# জন্মসনদে ও পাসপোর্টের ফটোকপির নোটারাইজড কপি।
সুপারিশকৃত আবেদনকারীদেরকে ঢাকায় অবস্থিত ' রাশিয়ান সেন্টার অব সায়েন্স অব কালচার ' এ মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে হইবে। সেখানে আবেদনকারীদের ভাষাগত দক্ষতা যাচাই করা হয় যার ভিত্তিতেই করা হয় চুড়ান্ত মূল্যায়ন।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে এই বৃত্তির সার্কুলার প্রকাশের পর আবেদন করার জন্য খুবই অল্প সময় পাওয়া যায়। তাই প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখতে হয়
৩। দক্ষিণ কোরিয়ার KGSP Scholarship
KGSP র পূর্ণরূপ হচ্ছে কোরিয়ান গভর্ণমেন্ট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার প্রদত্ত একটি বৃত্তি যেটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতি বছর বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এই স্কলারশিপ পেতে হলে নিজেকে অন্যদের চেয়ে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। যেমন ভালো একাডেমিক রেজাল্ট, IELTS স্কোর, কোরিয়ান ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট, এক্সট্রা কারিকুলাম সার্টিফিকেট। কোরিয়ান ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট না থাকলেও কোনো সমস্যা। এই বৃত্তি পাওয়ার পর প্রথম বছর সরকারিভাবে কোরিয়ান ভাষা শিখিয়ে নেওয়া হয়। স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি সকল কোর্সের ক্ষেত্রেই এই স্কলারশিপের আবেদন করা যাবে।
এই স্কলারশিপের আওতায় যে সুযোগ সুবিধাগুলো পাবেন তা হলো -
# সম্পূর্ণ টিউশন ফি মাফ
# ফ্রিতে থাকা খাওয়া
# মাসিক ভাতা
# ভিসা খরচ
# এক বছর ফ্রিতে কোরিয়ান ভাষা শেখার সুযোগ
# স্বাস্থ্য বীমা
# বছরে একবার দেশে আসা যাওয়ার বিমান টিকেট
# কোর্স শেষে এককালীন ভাতা
প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে যেকোনো সময় এই বৃত্তির সার্কুলার প্রকাশিত হয়ে থাকে। সার্কুলারের জন্য চোখ রাখতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে।
ভারতের ICCR বৃত্তি:
উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতের বিখ্যাত স্কলারশিপ হচ্ছে ICCR স্কলারশিপ। জনপ্রিয় এই স্কলারশিপের মাধ্যমে বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা ভারতের নামীদামী সব বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট এবং পিএইচডি কোর্সে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে থাকে। প্রতি বছর ২০০জন শিক্ষার্থীকে এই স্কলারশিপের মাধ্যমে ফ্রিতে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।
২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ' সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন ' অনুষ্ঠানে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সূবর্ণ জয়ন্তী স্কলারশিপ নামে একটি স্কিমের ঘোষনা দেন। এই স্কিমের আওতায় আরও ৫০০ আসন বৃদ্ধি করা হয়।
ICCR স্কলারশিপে যা যা থাকছে -
# সম্পূর্ণ টিউশন ফি
# আবেদনের জন্য কোনো ফি লাগবে না
# আবাসন খরচ এবং খাবার খরচ
# প্রতি মাসে উপবৃত্তির ব্যবস্থা (স্নাতক ১৮০০০, স্নাতকোত্তর ২০০০০, পিএইচডি ২২০০০ রূপি)
# যাওয়া আসার বিমান ভাড়া
# চিকিৎসা সেবা
ICCR স্কলারশিপের জন্য সার্কুলার প্রকাশিত হয় প্রতি বছর ডিসেম্বরে। এ বছর আবেদনের শেষ তারিখ ৩০ এপ্রিল।
আবেদন করতে যা যা লাগবে -
# সকল একাডেমিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট এবং নম্বরপত্র
# পাসপোর্ট
# জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদের ইংরেজি কপি
# স্বাস্থ্য পরীক্ষার সার্টিফিকেট
# ছবি
# এইচএসসির সিলেবাস
# চারিত্রিক সনদ
সঠিকভাবে আবেদন করা হয়ে গেলে আবেদনকারীদেরকে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। লিখিত সেই পরীক্ষাটি হবে শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় তোমার দক্ষতার উপর। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে।
বিভিন্ন দেশের সরকারি স্কলারশিপের ওয়েবসাইট:
যুক্তরাষ্ট্র : www.dol.gov
অস্ট্রেলিয়া : https://www.deakin.edu.au/
ইংল্যান্ড : www.ukba.homeoffice.gov.uk
কানাডা : http://www.labour.gov.on.ca/
কোরিয়া : http://www.niied.go.kr/eng/contents.do?contentsNo=78&menuNo=349
তুরস্ক : https://tbbs.turkiyeburslari.gov.tr/
রাশিয়া : http://www.labour.gov.on.ca/
সৌদি আরব : http://www.moi.gov.sa/
সিঙ্গাপুর : http://www.mom.gov.sg/
বিদেশে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব:
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা প্রধান যে সমস্যার মুখোমুখি হয় তা হচ্ছে পার্ট টাইম জব। স্কলারশিপ ছাড়া নিজের খরচে পড়তে গেলে অনেক টাকা-পয়সার প্রয়োজন পড়ে। ফলে নিজের হাত খরচ এবং অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য পার্ট টাইম জবের জন্য ছুটাছুটি করতে থাকে। কিন্তু দিনের বেশিরভাগ সময় পার্ট টাইম জবে লিপ্ত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করা এবং পড়াশোনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এর কারণে অনেককেই রেজাল্ট খারাপ করতে দেখা যায়। এরকম হলে বাইরের দেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার মানেই হয়না। কাজেই বাইরের দেশে পড়াশোনা করতে গেলে এই জিনিসটা মাথায় রেখে এগোতে হবে। হ্যাঁ, পার্ট টাইম জব আপনি করতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস এবং পড়াশোনার বাইরের সময়টুকুতে। অনেক দেশে কিন্তু বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট টাইম জব নিষিদ্ধ।
বিদেশে পড়াশোনার জন্য কোন্ দেশে ভিসা পাওয়া সহজ :
ইচ্ছা থাকলে এবং চেষ্টা করলে বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া সম্ভব। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মালয়েশিয়া, ভারত, চীন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, মাল্টা, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল, দক্ষিণ কোরিয়া এইসব দেশের ভিসা পাওয়া খুবই সহজ। এছাড়া বাকি দেশগুলোতে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন হলেও সম্ভব। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি যেই দেশেরই ভিসা নিতে চান না কেন , সেই দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা দেখে নিবেন। কারণ বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে ঐ দেশের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোটা অনেক জরুরী।
বিদেশে পড়াশোনার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার উপায়:
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে হবে। তা নাহলে ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই তোমাকে ঐ দেশের ভিসা পেতে হবে। ভিসা পাওয়ার জন্য প্রথমেই ঐ দেশের আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ই ভিসার আবেদনপত্র সরবরাহ করে থাকে। আর যদি তা না হয় আপনাকে কষ্ট করে দূতাবাস থেকে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র দূতাবাসে জমা দিতে হবে।
ভিসার জন্য যে সব কাগজপত্র লাগবে -
# সকল একাডেমিক পরীক্ষার সনদপত্র, নম্বরপত্র এবং প্রশংসাপত্র
# জন্ম সনদ
# পাসপোর্ট
# বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রমাণপত্র বা অফার লেটার
# আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র
# আর্থিক সামর্থ্যের স্পন্সর বা গ্যারান্টর
# স্পন্সর বা গ্যারান্টরের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্কের প্রমাণ
# স্পন্সরের আয়ের উৎসের তথ্য
# ছবি
# ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট
# মেডিকেল ইন্সুরেন্সের কাগজপত্র
# পুলিশ ছাড়পত্র
বিদেশে পড়াশোনার খরচ :
বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে স্কলারশিপের উপর ভিত্তি করে দেশ নির্বাচন করা উচিত। কারণ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা অনেক ব্যয়বহুল। যদি স্কলারশিপ পেয়ে যান তাহলে বিশ্বের এক নাম্বার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যদি স্কলারশিপ না পান সেক্ষেত্রে আপনার আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী দেশ নির্বাচন করা উচিত। জেনে অবাক হবেন আমেরিকায় শুধু স্নাতক পড়তেই লেগে যায় ২০ লাখ। কানাডায় ১৫ লাখ। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে গেলে লাগে আঠারো থেকে বিশ লাখ। ভারত, চীন, মালয়েশিয়ায় পড়তে খরচ লাগে আট দশ লাখ। এছাড়াও থাকা খাওয়ার খরচ, পোশাক পরিচ্ছদ, যাতায়াত ভাড়া, হাত খরচ, চিকিৎসার খরচ তো আছেই।
তবে আপনি যদি স্কলারশিপ পেয়ে যান তাহলে তো সব ফ্রি। আপনার যদি বিদেশে পড়াশোনার ইচ্ছা এবং স্বপ্ন থাকে, আপনি পারবেন, সুযোগ আছে। তাই ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ডকুমেন্টস রেডি করে যাত্রা শুরু করুন। তবে কোনো দালাল চক্র কিংবা ফ্রড এজেন্সির ধারে কাছেও যাবেন না। এতে করে তারা আপনার অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিবে।
বিদেশে পড়াশোনা করার সুবিধা ও অসুবিধা:
বাইরের দেশে পড়াশোনার সুবিধা এবং অসুবিধা দুটাই আছে। প্রথমে বিদেশে পড়াশোনা করার সুবিধাগুলো আলোচনা করা যাক
বিদেশে পড়াশোনার ৫ টি সুবিধা:
বাইরের দেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে অর্থাৎ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনি কী ধরনের সুযোগ সুবিধা অর্জন করতে পারবেন সেরকম পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করা হলো -
১) বিদেশে পড়াশোনার প্রথম সুবিধা : সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
সাধারণত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন ধর্মের এবং বিভিন্ন বর্ণের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে আসে। বিদেশে পড়াশোনা করতে যাবার বড় সুবিধা হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ হওয়া। এর ফলে বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন সংস্কৃতির বিভিন্ন নিয়মনীতি ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানা যায়।
২) বিদেশে পড়াশোনার দ্বিতীয় সুবিধা : আত্মনির্ভরশীলতা
বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বড় অর্জন হচ্ছে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে দেশে থাকতে আপনি আপনার পরিবারের উপর নির্ভরশীল থাকতেন। এখন বিদেশের মাটিতে আপনি একা। এখানে আপনার জীবনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। কারণ এখানে আপনার কোনো হেল্পিং হ্যান্ড নেই যে আপনার কাজগুলো আপনাকে করে দিবে। বিদেশে পড়াশোনা করার সময় নানা রকম দক্ষতা অর্জিত হয়। বিদেশে নানা রকম মানুষের সাথে কাজ করা , ওদের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানো, তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা এই ধরণের বিভিন্ন কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
৩) বিদেশে পড়াশোনার তৃতীয় সুবিধা : আধুনিক শিক্ষা অর্জন
বিদেশি শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যাধুনিক। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে আপনি উন্নত এবং আধুনিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পাবেন। দেশের পুঁথিগত এবং মুখস্থ বিদ্যা থেকে বেরিয়ে আপনি গবেষণালব্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সমন্বয় সাধন করতে পারবেন। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত শিক্ষার্থীদের সাথে খাপ খাওয়ানোর মানসিকতা তৈরি হয় বিধায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কো-অপারেটিভ মনোভাব তৈরি হয়।
৪) বিদেশে পড়াশোনার দ্বিতীয় সুবিধা : চাকরির সুযোগ
বিদেশে পড়াশোনা করা একজন শিক্ষার্থীর জীবনে চাকরির অভাব হয়না। দেশ বিদেশের বিভিন্ন সেক্টরে আছে বিশাল চাকরির সুযোগ। বাইরের দেশের ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট অর্জন করলে তা তোমার সিভিতে প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে। দেশে এসে চাকরি করতে চাইলেও অপেক্ষাকৃত অধিক সহজে ভাল চাকরিতে যোগদান করতে পারবে। বিদেশে পড়াশোনার সময় তুমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ সেটা তোমাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
৫) বিদেশে পড়াশোনার চতুর্থ সুবিধা : ঝকঝকা ক্যারিয়ার
বিদেশে উচ্চশিক্ষার কদর সবসময় ই ছিল, আছে এবং থাকবে। দেশ বিদেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা প্রার্থীদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও বাইরের দেশে পড়াশোনা করতে গেলে ঐখানে অনেক নতুন নতুন কাজের সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলো নিজ দেশে পাওয়া যায় না। বিদেশের কাজগুলো সাধারণত আমাদের দেশের মতো একগুঁয়ে নয়। আনন্দদায়ক। কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায়। এবং কাজের প্রতি আগ্রহও খুঁজে পাওয়া যায়। এভাবে তোমার ক্যারিয়ার হিসেবেও যেকোনো একটিকে বেছে নিতে পারবে। বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে এটা একটা বিশাল সুযোগ নিজের পছন্দের কাজকেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া যায়। দেশে কিন্তু এরকম সুযোগ নেই বললেই চলে।
এতো গেলো বিদেশে পড়াশোনার সুবিধার কথা। বাইরের দেশে পড়াশোনাকরতে যাওয়ার কিন্তু কিছু অসুবিধাও আছে। অনেককেই অসুবিধা সম্মুখীন হতে দেখা গেছে। চলো তাহলে দেখে আসি বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার অসুবিধাগুলো কি কি -
বিদেশে পড়াশোনার অসুবিধা:
বিদেশে পড়াশোনার অসুবিধাগুলো হলো -
১) পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো:
বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে শিক্ষার্থীরা প্রথমেই যে সমস্যার মুখোমুখি হয় তা হচ্ছে নতুন পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানো। একেবারেই আলাদা পরিবেশ, আলাদা খাদ্যাভ্যাস, আলাদা ভাষা, আলাদা আচার আচরণ, নিয়ম শৃঙ্খলা, কৃষ্টি কালচার। সেখানে তুমিই একরকম আর বাকীরা অন্যরকম। ফলে অন্যদের সাথে এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলাটা নতুনদের জন্য একটা বড় ধরনের অসুবিধা। বাইরের দেশের এই নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়াটা যখন কষ্টকর মনে হবে তখনই পড়াশোনার ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে থাকবে।
২) একা একা লাগা:
বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় আরেকটা অসুবিধা হলো পরিবার থেকে দূরে থাকা। বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ছেড়ে দূরের দেশে থাকতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন বিষন্নতায় ভোগে। এতে পড়াশোনার ক্ষতি সাধন হয়।
৩) প্রতিকূল আবহাওয়া:
আপনি যেই দেশে পড়তে যাচ্ছেন সেই দেশের আবহাওয়া নিশ্চয় আপনার দেশের মতো সুইটাবল নয়। হঠাৎ করে শীত প্রধান দেশগুলোতে বসবাস করাটা নতুনদের জন্য খুবই অস্বস্তিকর। আবার কখনো ঝড়, কখনো ভারী তুষারপাত । বিদেশে যাওয়ার পর আবহাওয়া সংক্রান্ত কারনে অনেকের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়।
৪) ভিন্ন পদ্ধতিতে পড়াশোনা:
বিদেশে পড়াশোনা আমাদের দেশের মতো কেবল শ্রেণিকক্ষেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ক্লাশের পাশাপাশি গবেষণা, লাইভ প্রজেক্ট, রেফারেন্স খোঁজার জন্য দিনরাত ইন্টারনেট, লাইব্রেরী, পাঠ্যপুস্তকে পড়ে থাকতে হয়।
৫) বিদেশে পড়াশোনা মেয়েদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ:
বিদেশে পড়াশোনা করতে হলে সবার আগে চিন্তা হয় কোথায় থাকবে? একটা মেয়ে শিক্ষার্থীর জন্য সেখানে বসবাস করাটা নিরাপদ হবে কিনা ? সবসময় একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়। যেটা একটা বড় সমস্যা। বাবা- মায়েরা সারাক্ষণ দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকে মেয়ে বিদেশে পড়াশোনা করতে গেছে কে তাদের নিরাপত্তা দেবে, কে তাদের দেখে রাখবে? সমাজ কী বলবে।
৬) বিদেশে পড়াশোনার খরচ বেশি:
বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি, আবাসন খরচ, জীবন-যাপনের খরচ অনেক বেশি যা মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে চালানো সম্ভব নয়। ফলে অনেককেই বাধ্য হয়ে পার্ট টাইম জব করতে হয়। অনেক সময় পার্ট টাইম জব পাওয়াও যায় না। ফলে পড়তে হয় মহা বিপদে। এই আর্থিক চাপের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হিমসিম খেতে হয়।
বিদেশে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত নিলে ১ বছর আগে থেকেই যে কাজগুলো করা দরকার:
বিদেশে পড়াশোনার কথা মাথায় আসলে আবেদনের আগেই এই কাজগুলো করে রাখুন
১) সার্টিফিকেটে আপনার নাম, আপনার পিতা-মাতার নাম ভুল থাকলে অতিসত্বর তা সংশোধন করে নিন। ভোটার আইডি কার্ড বা স্মার্টকার্ডের সাথে আপনার নাম, আপনার পিতা-মাতার নাম এবং সার্টিফিকেটের নাম মিল থাকতে হবে।
২) বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে পাসপোর্ট করতে হবে। আর পাসপোর্ট করার সময় যাতে কোনো ধরনের ভুলভ্রান্তি না হয় সেই জন্য এনআইডি কার্ড এবং সার্টিফিকেটের তথ্য প্রদান করুন।
৩) বিদেশে উচ্চশিক্ষার আবেদন করার আগেই SSC এবং HSC র সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট শিক্ষা বোর্ড থেকে সংগ্রহ করে রাখুন। স্নাতক পরীক্ষার সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সংগ্রহ করে রাখুন।
৪) বোর্ড/ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট তোলার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই করে নিতে হবে তা নাহলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য Apply করতে পারবেন না।
৫) আগে থেকেই IELTS এর প্রিপারেশন নিয়ে রাখুন যাতে করে সঠিক সময়ে পরীক্ষা দিতে রেজাল্ট পেতে পারেন।
৬) আর বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে SAT/ ACT/GRE/ GMAT পরীক্ষার প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রাখুন।
৭) আপনার পরিচিত দু'জন শিক্ষকের কাছ থেকে দুটি রিকমেন্ডেশন লেটার সংগ্রহ করে রাখুন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এটা আবশ্যক।
৮) বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য SOP এবং ভিসার জন্য কভার লেটার লেখার প্রস্তুতি নিন।
৯) বিদেশে পড়াশোনা করতে যেতে চাইলে সেদেশের কমপক্ষে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানুন। এবং যে Subject নিয়ে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক সেটি নিয়ে ভালভাবে চিন্তা ভাবনা করুন।
১০) আপনার বাজেটের উপর ভিত্তি করে পছন্দের শহর সহ ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ চয়েস করে রাখুন এবং নিয়মিত যোগাযোগ করুন।
১১) পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে আবেদনের শুরুর তারিখ এবং শেষ তারিখ মনে রেখে যথা সময়ে আবেদন করুন।
১২) বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ পেতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকুন এবং যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করুন।
১৩) নিজের কাজ নিজে করতে শিখুন। যেমন নিজের রান্নাবান্না, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি। কারণ বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে ঐখানে এইসব করানোর লোক পাবেন না।
১৪) ড্রাইভিং শিখে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে ফেলতে পারেন, বিদেশে পড়াশোনা করার সময় হয়তো কাজে আসতে পারে।
১৫) কম্পিউটার বিষয়ক বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট করুন। বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে ঐ সময় এটি আপনাকে অনেক সাহায্য করতে পারে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য এই ১৫ টি পয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে পোস্ট লেখকের ব্যক্তিগত আক্ষেপ:
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের ইচ্ছা প্রায় সবারই থাকে। প্রতি বছর অসংখ্য শিক্ষার্থী HSC পাশ করার পর বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভের স্বপ্ন দেখে। ইন্টারমেডিয়েট পড়ার সময় এরকম একটা স্বপ্নে বিভোর ছিলাম আমি নিজেও। কিন্তু সঠিক তথ্য এবং উপযুক্ত গাইডলাইনের অভাবে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে জাহাঙ্গীরনগরকেই বেছে নিতে হয়। কিন্তু আজকে সতেরো বছর পরে এসেও বিদেশি ডিগ্রি অর্জনের সেই আকাঙ্ক্ষা এখনো কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।
আরও পড়ুন